জামিয়া আরাবিয়া মিফতাহুল উলূম: সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও ইতিহাস
জামিয়া আরাবিয়া মিফতাহুল উলূম (মাসকান্দা, ময়মনসিংহ) একটি আবাসিক কওমি দ্বীনি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি মাসকান্দা, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন ১৫ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি ১৩৯৬ হিজরি / ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় মিফতাহুল উলূম মাদ্রাসা হিসেবে।
শুরুর দিকে এটি একটি মক্তব আকারে শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার ধাপ বাড়িয়ে তাকমীল/দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) স্তর চালু করা হয়ও ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ইফতা বিভাগ (ফতোয়া বিভাগ) খোলা হয়।
অবকাঠামো, শিক্ষক ও ছাত্রসংখ্যা
ছাত্রসংখ্যা: প্রায় ৭০৬ জন ছাত্র নিয়মিত দ্বীনি শিক্ষা নিচ্ছে।
শিক্ষক সংখ্যা: মোট ৩৪ জন যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষক রয়েছেন।
কর্মচারী সংখ্যা: আনুষাঙ্গিক ও প্রশাসনিক কাজে ১৪ জন কর্মচারী কাজ করেন।
অবস্থান: ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মোড় থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে মাসকান্দা এলাকায়।
পাঠক্রম ও বিভাগসমূহ
জামিয়ায় শিক্ষাদান শুরু হয় ছোট বিভাগ থেকে, ধাপে ধাপে উচ্চতর স্তরে উন্নীত হয়েছে। মূল বিভাগগুলো নিম্নরূপ:
নূরানী বিভাগ: শিশুদের আরবী বর্ণ ও কুরআন শুদ্ধ উচ্চারণ এবং মৌলিক দ্বীনি বিষয় শেখানো হয়।
নাযিরা বিভাগ: কুরআন তিলাওয়াত ও প্রাথমিক দ্বীনি বিষয়াবলী নিয়ে কাজ করা হয় যেখানে হিফয বা কিতাব বিভাগে আগ্রহ বাড়ানো হয়।
হিফযুল কুরআন বিভাগ: যেসব ছাত্র কুরআন মুখস্থ করতে চান, তাদের জন্য এই বিভাগ চালু রয়েছে। jamiamaskanda.com
তাকমীল/দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স): উচ্চতর দ্বীনি স্তর; ছাত্ররা হাদীস, তাফসীর ও অন্যান্য দ্বীনি গবেষণার কাজ করেন।
ইফতা বিভাগ (ফতোয়া বিভাগ): তাফসীর, ফিকহ, উত্তরাধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গভীর দ্বীনি সিদ্ধান্ত ও পণ্ডিত পরামর্শ갈াপের জন্য সহায়ক একটি বিভাগ।
সামাজিক অবদান ও শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা
গরীব ও এতিম ছাত্রদের সহযোগিতা: প্রায় ২৫০ জন গরীব, এতিম ও অসহায় ছাত্রকে জামিয়ার “গোরাবা ফান্ড” থেকে ফ্রি খাদ্য দেওয়া হয়। jamiamaskanda.com+1
ছাত্রদের জন্য সাধারণ শিক্ষার বিষয়াবলী যেমন বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও ভূগোল বাবদ পাঠদান করা হয়, যেন তারা দ্বীনি ও সাধারণ শিক্ষায় সমন্বয় করতে পারে।
পাঠাগার ও কিতাব সংগ্রহের প্রচেষ্টা রয়েছে, যাতে ছাত্ররা গবেষণা ও পড়াশোনা সহজে করতে পারে।
মসজিদ ও ইমারত
জামিয়ার মসজিদ “মসজিদুল আমান” নামে পরিচিত; এটি ওয়াকফ ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত। মসজিদের জন্য মোট জমির পরিমাণ ৩২.৫০ শতাংশ, যার মধ্যে ১৩ শতাংশ মসজিদ কমপ্লেক্স ও অবশিষ্ট ভবিষ্যতে সম্প্রসারণ এবং সৌন্দর্যবর্ধন কাজে ব্যবহারযোগ্য ভূমি রয়েছে।
মসজিদের মূল কাঠামোটি পাকা, ৪ তলা জামে মসজিদ তৈরি করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত অযুখানা রয়েছে।
বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
চ্যালেঞ্জসমূহ
শ্রেণিকক্ষের সংখ্যায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বর্তমানে যে অবকাঠামো রয়েছে, তা ছাত্রসংখ্যার বিবেচনায় অপর্যাপ্ত বলা হচ্ছে।
শিক্ষক ও কর্মচারীদের সুবিধাস্বল্পতা (কর্মসুচী, বাসস্থান, অবকাঠামো) বাড়ানো দরকার।
ছাত্রাবাস, পাঠাগার ও উচ্চমানের গ্রন্থাগার সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রয়োজন। আর চর ও স্থানিক সম্প্রসারণ খুব দ্রুত করতে হবে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ ও ছাত্রাবাস সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে।
কম্পিউটার ল্যাব, ইন্টারনেট সংযোগসহ প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি করা হবে।
পাঠাগার আরও সমৃদ্ধ করা হবে, দূর্লভ গ্রন্থ সংগ্রহ ও গবেষণার উপযোগী করে তোলা হবে।
মোটিভেটেড, ধর্মপ্রাণ ও সচেতন শিক্ষার্থীদের প্রতি মনোযোগ এবং তাদের সক্ষম করে তোলা হবে যাতে তারা সমাজে নেতৃত্ব দিতে পারে। (আখলাক-চরিত্র ও আমল-প্রবণতা উন্নত করা হবে)
উপসংহার
জামিয়া আরাবিয়া মিফতাহুল উলূম, মাসকান্দা ময়মনসিংহ, একটি ঐতিহ্যবাহী ও সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শুরু হয়েছিল স্বল্প পরিসর থেকে, কিন্তু আজ ছাত্রসংখ্যা, বিভাগসংখ্যা ও শিক্ষাগত ধাপ বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি একটি শক্তিশালী কওমি বিদ্যালয় রূপে প্রতিষ্ঠিত। গরীব ও অসহায় ছাত্রদের প্রতি উদার সহায়তা, দ্বীনি ও সাধারণ শিক্ষার মিলন ও উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ এই জামিয়া-কে বিশেষ আকর্ষণীয় করে তোলে।
ভবিষ্যতে যদি শিক্ষার মান তুলে ধরা হয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন দ্রুত করা যায় ও আধুনিক প্রযুক্তি ও শিক্ষাদান পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহ দেখানো হয়, তাহলে মিফতাহুল উলূম আরও ভালোভাবে সমাজ ও ধর্মচেতনায় একটি প্রভাবশালী কেন্দ্র হয়ে উঠবে।